BENGALI LETTERS FROM "PATRAM PUSHPAM" - by SRI ANIRVAN . Copyright

BENGALI LETTERS FROM "PATRAM PUSHPAM" - by SRI ANIRVAN . Copyright

পত্রং পুষ্পম
শ্রী অনির্বাণ

ভূমিকা

জীবনবৃক্ষের অজস্র পুস্পচ্ছ্বাসের মতো অজস্র পত্র I তার মধ্যে কয়েকটি সম্পাদিত করে সংকলিত হলো তিনটি গুচ্ছে I

প্রথম গুচ্ছটি সুলেখিকা সুধী জিজ্ঞাসু শ্রীমতি সুধা বসুকে লেখা I শাস্ত্রীয় এবং অন্তরজীবন - সম্পর্কিত নানান প্রশ্নের মীমাংসার ফাঁকে ফাঁকে উছলে - ওঠা জীবন দর্শনের নানান টুকরো গুরুকথা এবং লঘুকথা I

দ্বিতীয় গুচ্ছটি লেখা বিদগ্ধ সুধী শ্রী অবনীভূষণ চট্টোপাধ্যায়ক়ে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যাঁকে তাঁর শেষ কাব্য গ্রন্থ 'দশমী ' উত্সর্গ করেছিলেন I সুহৃতসম্মিত 'অনর্গল ' ভাষণের সহজ আনন্দে ভরপুর কোন কোন চিঠিতে হঠাত যেন বেজে ওঠে 'ক্ষনিকার ' সুর I ৩৬ নং পত্রে আছে তার জীবনের গোপন সুধাপাত্র হৈমবতী দর্শনের কথা , যেটি তাঁর 'সমস্ত জীবনের যত কিছু পাওয়া ' আর দেওয়ার অক্ষীয় মাণ শতধার উতসো I

তৃতীয় গুচ্ছের প্রাপিকা হলেন এলাহাবাদের ভক্ত কবি শ্রীমতি অমিতা মজুমদার Iএতে পাই অন্তর- জীবন রচনার কয়েক ঝলক আলোক সূত্র I

তিনটি গুচ্ছের মধ্যেই জেগে আছে তাঁর প্রজ্ঞাকৌতুকী হৃদয়, 'ভুবনের গভীরে পুরূষউত্তমের হৃদয় স্পন্দন শোনার জন্য অনুক্ষন উতকর্ণ হয়ে I তিনটি গুচ্ছের মধ্যেই অন্ত:স্রোতা হয়ে বয়ে চলেছে 'এক নি:শব্দ সমুদ্রভিসারিণী গতি ' I তিনটি গুচ্ছই কাউকে -না কাউকে উপলক্ষ্য করে তাঁর স্বগত ভাষণ, তাঁর অলিখিত গ্রন্থ উত্তরায়ণের এক একটি অক্ষর I

শিলং

২৩.১.৩৫

আমাকে চিঠি লিখতে সংকোচ করো না I যখন যা তোমাদের জানবার আগ্রহ হবে, আমায় স্বচ্ছন্দে জিজ্ঞাসা করো , আমি আনন্দের সঙ্গেই জবাব দেব I

তুমি জিজ্ঞাসা করেছিলে 'তারা' ক়ে নীল সরস্বতী বলা হয় কেন I দশা মহাবিদ্যার প্রথম তিনটি বিদ্যাতে যথা ক্রমে প্রজ্ঞা শক্তির সত চিত ও আনন্দ এই তিনটি রূপ দেখানো হয়েছে I কালী শুদ্ধ সত্তা রুপিনী, তারা শুদ্ধ চিদ্রুপিণী এবং শোরষী শুদ্ধ আনন্দ রুপিনী,তারাচিন্ময়ী ,প্রজ্ঞারুপিনী I বৌদ্ধেরা প্রজ্ঞা পারমিতার উপাসনা করতেন, তারা আবার বৌদ্ধদের ও দেবী I এই প্রজ্ঞার রূপ ফোটে অরুপের ভূমিতে objecively (অবশ্য suprasensuous way তে ) আকাশের আনন্ত্যে, subjectively বিজ্ঞানের আনন্ত্যে I আকাশের আনন্ত্যের symbol হলো নীলিমা, আর বিজ্ঞানের symbol হলো সরস্বতী I এই দুটির প্রতি ইঙ্গিত আছে তারাতে, তাই তিনি নীল সরস্বতী Iস্বচ্ছ নীলাকাশের দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে থাকলে অনুভব হয় যেন ওই নীল এর রোমকূপ ভেদ করে শুভ্র একটা আলো ঠিকরে পরছে I ওই নীলের আলো (ঠিক নীল আলো নয় কিন্তু ) ধরে তারা অনুভব আনা যেতে পারে I সেই আলোর মূলে যে সন্মাত্র তাই কালী , আর তার যে আনন্দ টলমল ঐশ্বর্য , তাই সরশী Iএই সবটা আবার সহজ হয়েছে 'ভুবনেশ্বরী তে' I আশা করি বুঝতে পেরেছ I

চন্ডী সম্বন্ধে যে প্রশ্ন করেছ, তার জবাব তো এক কথায় হয় না, তুমি জিজ্ঞাসা করে যেও , আমি বলে যাব I

তত্ত্বে প্রবেশ করতে হলে অন্তর- মুখ হয়ে ধারনা করতে হবে , এ তো বুঝতেই পারছ Iচন্ডীর চরিত্রের তিন দেবতা -মহাকালী মহালক্ষ্মী আর মহা সরস্বতী Iআমরা মহিষাসুরমর্দিনী মহালক্ষ্মীর -ই পূজা করে থাকি বছর বছর I এঁকে দিয়ে ই সাধনা আরাম্ভো করা উচিত Iসাধনার একটা logical scheme আছে , আর একটা psychological I বোঝবার জন্য logical scheme আর হাতে- কলমে কাজ করবার জন্য psychological scheme I মহাকালীর অবস্থা হল জগত যখন একার্ণবিকৃত চিত্ত যখন প্রলীন তখনকার অবস্থা Iএ অবস্থায় সাধনা আরম্ভ হতে পারে না I তাই মহালক্ষ্মী যেখানে মহিষা সুর বধ করছেন , সেই ভূমি থেকে সাধনা আরাম্ভো করে অচেতন ভুমিতে নামতে হবে এবং অতি চেতন ভূমিতে উঠতে হবে I এক মহিষাসুরের সঙ্গেই দেবী প্রত্যক্ষ যুদ্ধ করছেন,আর দুটিতে যুদ্ধ করিয়েছেন নিজে আড়ালে থেকে মহিষ প্রাণ শক্তির প্রতীক পুরানে যম মহিষ বাহন , কেননা মৃত্যু ই প্রানের অধিপতি I

প্রাণকে বশে আনতে হবে এই দিয়ে সাধনার শুরু তার জন্য দেবীকে তোমার মধ্যে জাগাতে হবে , সমস্ত চিত্তবৃত্তির বা চিত শক্তির সংহরণ দ্বারা I এই হলো দেবতা দের মিলিত তেজে দেবীর উত্পত্তি I যোগের ভাষায় ব্যাপারটা হছে প্রত্যাহার থেকে প্রাণায়াম I আমি বায়ু ধারনার কথা বলছি না - সুক্ষ্ম প্রানের সংযমের কথাই বলছি Iএইটি প্রথম করণীয় তাইতে তোমার মধ্যে যে সুষমা , যে শ্রী ফুটবে, সেই তোমার মহালক্ষ্মী রূপ মায়েরা এই দিব্য শ্রী দিয়েই পুরুষের প্রমত্ত প্রাণশক্তিকে বশে আনতে পারে. এই হলো Practical life -এ এই সাধনার একটি প্রয়োগ কথাটা ভেবে দেখো Iআজ যাই I স্নেহাশিস নিও

শিলং ৬.২.৫৫

তোমার ১ লা তারিখের চিঠি পেলাম I তোমার সব প্রশ্নের বিস্তৃত উত্তর এক চিঠিতে হবে না I আজ মোটামুটি লিখছি, তুমি এই প্রসঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেও - ক্রমে ক্রমে সব পরিষ্কার হয়ে আসবে I একটা মূল ভাবকে যদি ধরতে পার, ক্রমে দেখবে তার ভিতর থেকেই আর সব ভাব বেরিয়ে আসছে I চিত্তের সংস্কার মুক্ততা তার জন্য বিশেষ প্রয়োজন I ওই যে স্বচ্ছ নীলাকাশের ভাবনা তার মাঝে হৃদয় টিকে অতি সহজে মেলে দিয়ে নিস্তব্ধ হুয়ে থাকা - ওতেই তোমার বুদ্ধি শুদ্ধ হবে , অনেক কিছু আপনা হতেই তখন বুঝতে পারবে I

মহাশক্তি সম্বন্ধে চন্ডীর বিশ্লেষণ আর শ্রী অরবিন্দের বিশ্লেষণ ঠিক এক নয় I শ্রী অরবিন্দ ব্যাখ্যা করেছেন COSMIC দিক থেকে, ontological দিক থেকে, চন্ডীর বিশ্লেষণ সাধানার দিক থেকে I অবশ্য এ কথাটাই যতটা বিরোধ সূচিত হচ্ছে, আসলে এতটা বিরোধ কিন্ত নাই I

দেবী স্বয়ং যুদ্ধ করছেন মহিষ মর্দিনী রূপেই I প্রথম চরিত্রে এবং উত্তম চরিত্রে যুদ্ধ হচ্ছে প্রতিভূর মারফতে I একটি তে যুদ্ধ করছেন বিষ্ণু, দেবী রয়েছেন আড়ালে, আর একটিতে যুদ্ধ করছেন চন্ডিকা, সেখানে ও দেবী নিজের দেহ হতে তাঁকে নিষ্কাশিত করে আড়ালে রয়েছেন I এর ব্যান্জনাটা এই - প্রাণ লোকের উপরে এবং নিচে কাজ করতে গেলে একটা Transcendence এর অনুভব ক়ে জাগিয়ে রেখে কাজ করতে হয়. I নইলে sub -conscious বা super - conscious দুই ই আমাদের সত্তাকে অব্যক্তের প্রভাবে আছন্ন বা আবিষ্ট করে রাখতে পরে I এই আবেশ দূর করবার জন্য বিবেক জ্ঞান অপরিহার্য I মধ্য ভূমিতে প্রাণ জয় দ্বারা এই বিবেক জ্ঞান অর্জিত হতে পারে I প্রাকৃত ক্ষেত্রে ও দেখো, আমাদের চেতনা প্রাণ - বাসনার সঙ্গে কিরকম জড়িয়ে আছে I প্রানের স্ফুটতম অভিব্যক্তি হয় ভাবে I কিন্তু সেই ভাবের পরে যদি জ্ঞানের আলো এসে না পড়ে, তাহলে ভাবেও একটা আলোর আড়াল রচিত হতে পারে. I এই আলোর আড়ালটাই শুম্ভো নিশুম্ভো বধের মূল কথা I শুমভো শব্দ এসেছে শুভ বা শুম্ভ ধাতু হতে - যার অর্থ হচ্ছে to shine I শুভ্রতার ও একটা মোহ -সঞ্চারক শক্তি আছে যাকে গীতাকার সাত্ত্বিকাতার বন্ধন বলেছেন I ইসপনিষাদে আছে বিদ্যা আর অবিদ্যা দুই ই অন্ধতমে নিয়ে যায় I অবিদ্যার অন্ধ - তম হচ্ছে প্রথম চরিত্রের 'যোগনিদ্রা জগত্পতে:', আর বিদ্যার অন্ধতম হচ্ছে উত্তম চরিত্রে শুম্ভো I চাই গুনাতীত ভূমিতে প্রতিষ্ঠা এবং সেই খান থেকে গুন- গুলোকে বশে আনা , তাদের দিব্য ভাবনার অনুকূলে খেলিয়ে নেওয়া I

এই জন্যই বিবেক জ্ঞান এত দরকার I প্রাণ বাসনা শুদ্ধ না হলে বিবেক জ্ঞান হবে না I. তাই মহিষ্মর্দিনির সাধনা সবার আগে. I শুদ্ধ প্রাণ নিয়ে হানা দিতে হবে শুম্ভার রাজ্যে -------- বেদে যাকে অসুরের স্বর্ণ পুরি বলে বর্ণনা করা হয়েছে I শুম্ভো বধ হলে পরে তোমার মাঝে যে বিষ্ণু চৈতন্য বা ব্যাপক চৈতন্য জাগবে , তাই দিয়ে cosmic ignorance এর root এ আঘাত করা--------- এই হল প্রথম চরিত্রের বিষয় I logical scheme এর প্রথম চরিত্র, কিন্তু personal সাধনায় ও টি আসে সবে শেষে I. শ্রী অরবিন্দের transformation of inconscience এই প্রথম চরিত্রের সাধনা , কিন্তু তার জন্য সাধক ক়ে আগে বিষ্ণু হতে হবে I আজ এই পর্যন্ত I যাই I . হৈমবতির প্রজ্ঞার আলো তোমাৰ হৃদয়কে আলোকিত করুক I



২৭ .২. ৫৫

সাক্ষীভাব থেকে বা আকাশভাবনা থেকে সংস্কার মুক্ততা আসতে পারে I অহং এর কুন্ডলীটি ভেঙ্গে ফেলতে হবে I কোনোও কিছু না চেয়ে শুধু যদি নিজেকে ফাঁকা বা রিক্ত করে দেওয়া যায় --------- যেমন ধর, গভীর রাতে তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেল আর তখন আকাশের নৈ :শব্দ্যক়ে তোমার হৃদয়ে নেমে আসতে অনুভব করলে যেন তোমারই সত্তার মাঝে পৃথিবী নি:সুপ্ত হয়ে আছে, তাহলে যে অপরূপ শান্তির ভাবটি আসে, ওই সংস্কার মুক্ততা আনবার সোপান .I general থেকে particular - এ আসা, সব কিছু ই deduce করা from one existence - এই ভাবটাও তাকে সাহায্য করে I শেষ পর্যন্ত আসে সহজ মানুষের একটা স্নিগ্ধ ঔদার্য - যেমন ব্যক্তি সম্পর্কে তেমনি মতবাদ সম্পর্কেও I

এমন করে যদি নিজের চারিদিকে আকাশের মতো বিরাট স্বচ্ছ উদার এবং বাধা -বন্ধোহীন একটা বিপুল্য ক়ে সব সময় অনুভব করো, যদি অনুভব করো ওই শৈবিসত্তা তোমায় আচ্ছন্ন আবিষ্ট করে রেখেছে দেহ প্রাণ - মনের অনুতে অনুতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে , তাহলে প্রাণ জয় সহজ হতে পারে I প্রাণ জয়ের একটা উপায় তার গতি কে স্তিমিত করা এবং অন্তর্মুখ করা .I মনে কারো তুমি যেন প্রশান্ত সমুদ্রের মতো , বাইরে ভিতরে যা কিছু, তোমার মাঝে এসে লয় হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তুমি কিছুকে কাউকে ধরতে ছুটে যাচ্ছ না - তাহলে নিজে থেকেই একটা পথ পেয়ে যাবে I গীতার সেই শ্লোক টা মনে পরছে তো ?-আপুর্জমান্চল প্রতিষ্ঠম ......ইত্যাদি ?

মহিষ মর্দিনী ই প্রাণকে জয় করেছেন - বীর্য প্রশান্তি করুণা তিনের সমন্বয়ে I. তাঁর চরণ সিংহের উপর I সিংহ তো বুঝছ ই শুদ্ধ রাজা বা শুদ্ধ প্রাণ I ধর , সিংহ বীর্য I একটা গভীর আত্মপ্রত্যয় আছে তোমার মাঝে , নিজেকে অনুভব করছ মহাশক্তির বাহন রূপে I এই অনুভবটাই অসুরকে বা প্রাণকে নির্জিত করবার পক্ষে যথেষ্ট I কিন্তু বীর্যের সঙ্গে শান্তি থাকবে, থাকবে স্বাচ্ছন্দ I আর , একটা ব্যাপ্তির ভাব I সব ব্যাপারটা যেন আকাশে লীলা চ্ছালে হচ্ছে , তাই তোমার মুখে ফুটে উঠছে স্মিত হাস্য I

এইটি ই তোমার কল্পরুপ I নিজের শুদ্ধ চিত্তের দর্পনে নিজেকে দেখো I নিজের রূপে নিজে বিভোর হও I কিন্তু উচ্চ্ছসিত হও না I অহংকৃত হও না I বা কারুণ্য হারিও না I অসুরকে ও যে তুমি আঘাত করছ, তাও করছ পরম মমতায় I তুমি যে মা I

অতিচেতনায় প্রতিষ্ঠাই আগে খুঁজতে হবে I সুষুম্নার পথ টি খুব পরিষ্কার হওয়া চাই .I এখানে তুমি গুহাতিত I কমলের দল বেয়ে প্রাণ উজিয়ে চলেছে, cortex - এ এসে সহস্র দল হুয়ে আনন্দে ছড়িয়ে পড়ল I সেইখানেই স্থিতি I ওই স্থিতি টুকু অভ্যস্ত হলে তারপর নামার কথা I অবচেতনা তখন কিন্তু রুপান্তরিত হয়ে যায় I যাকে আগে মনে করেছিলে কাদামাটি , তাকে দেখতে পাও যেন প্রান্পঙ্ক ,কমল দলের মূল সেইখানে , প্রতিমুহুর্তে তা সুধারস শোষণ করে ওই মহাশূন্যে ফুল ফুটিয়ে চলেছে I

আজ এই পর্যন্ত I একটা কবিতার offprint পাঠালাম I স্নেহাশিস I



২০ .৩. ৫৫

প্রাণ জয়ের সাধনায় একটি কথা মনে রাখতে হবে , প্রানের নিরোধ নয় , তার রূপান্তরই হলো এই সাধনার লক্ষ্য I মধ্যম চরিত্রে দেবগনের স্তুতিতে এই কথার ইঙ্গিত, একাধিক জায়গায় অসুর দিব্য হোক এই ছিল সংগ্রামের তাত্পর্য I ব্যবহারিক জীবনে এটি সিদ্ধ হয় প্রবৃত্তির মোড় ফিরিয়ে দিয়ে I মোড় ফেরানোর কথাটাতেও নিগ্রহের ভাব কিছুটা এসে যায়, কিন্তু আমি নিগ্রহের কাটা বলছি না I আবার প্রানের মাঝে একটা বিকৃত এবং মুড় রস পিপাসা আছে I এই রস পিপাসাকে উর্দ্ধায়িত করাই হলো প্রাণ জয়ের লক্ষ্য I রসবর্জনের কথাটা খুব সহজেই আমাদের মনে আসে অএবং খানিক বর্জন যে প্রথম অবস্থায় প্রয়োজন নয়, তাও বলছি না I কিন্তু আসল লক্ষ্য হলো রসের শোধন I বৈদিক ঋষি পবমান সোমের কথা বলেছেন I পাবামান শব্দ টার অর্থটাই হচ্ছে যা ক্রমশ :pure হয়ে উঠছে I purity সাধনার দুটি সংকেত যেতে পারে I দেহ- বোধকে অত্যন্ত স্বচ্ছ করে নিতে হবে , এই হলো গোড়ার কথা I সেই স্বচ্ছ দেহকোষের যুগপত একটা ব্যাপ্তি এবং উর্দ্ধয়ানের ক্রিয়া নিয়ে আসতে হবে I ব্যাপ্তির ক্রিয়া সিদ্ধ হোতে পারে সমস্ত শরীরের নাড়ীতন্ত্রে রসের অনুভুতিকে সঞ্চারিত করতে পারলে I যা কিছু তুমি অনুভাব করছ ,তা বিশেষ কোনও ইন্দ্রিয় দিয়ে নয়, কিন্তু সমস্ত শরীরের নাড়ীজাল দিয়ে I একটা গাছ নিস্পন্দ হয়ে দাড়িয়ে যেমন আলো বাতাসকে শুষে নেয়, তেমনি করে তোমার অন্তরের প্রাণকে আহার দেওয়া I যাই তোমার মধ্যে প্রবেশ করছে তাই আগুন হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে, আবার মেরুতন্ত্রে সংহতও হচ্ছে I মোটামুটি এইটিই হলো ব্যাপ্তির ক্রিয়া I সেই সঙ্গে মেরু তন্ত্রে একটি অধ :স্রোত ক়ে উর্দ্ধমুখী ভাবনা করা --- এই হলো উর্দ্ধয়ানের ক্রিয়া I খুব কঠিন মনে করনা, অল্প অভ্যাসেই এটা সিদ্ধ হতে পারে I 'ভ্রুবোর্মধ্যে প্রাণমাবেশ্যা সম্যক'--- গীতাতে এই সংকেতের কথা আছে I ভ্রু মধ্য একটা মাঝামাঝি station I হৃদয়েও তেমনই স্থিতি হতে পারে অথবা হতে পারে মুর্ধায় I যদি উপরে কোথাও স্থিতি হয় , তাহলে বাইরের অভিঘাতে যে প্রাণ স্রোত বইতে থাকে, তাকে উজানের দিকে নিয়ে যাওয়া সহজ হয় I

নিজেকে দেবীর ভাবে ভাবিত রেখো Iবলেছিলাম বীর্য থাকবে সংগ্রামে , কিন্তু মুখের হাসিটি যেন কোথাও না মিলিয়ে যায় I আর একটি কথা এর সঙ্গে যোগ করব, একটা অমৃত পান জনিত আনন্দের আবেশ যেন তোমার মাঝে সব সময় থাকে I

মহিষাসুর মর্দিনী মধু পানও-উতফুল্লা I এটা দিব্য প্রানের নেশা I সোজা কথায় একটা বড় নেশা না থাকলে ছোট নেশার মোহ কাটিয়ে ওঠা যায় না I জোর করে নেশা ছাড়ানো ও যায় না I এইখানেই উর্দ্ধায়ানের বা sublimation এর কথা ওঠে ! কিন্তু sublimtion শুধু নিচের থেকে উপরের দিকে ঠেললে হয় না, উপর থেকে আকর্ষণ ও করতে হয় I এই জন্যে ভ্রু মধ্যে চিত্তের সহজ ধারণা প্রাণ জয়ের অনুকুল I আজ এই পর্যন্ত I স্নেহাশিস I



১৭ .৪ .৫৫

............... ভ্রু মধ্যে ধারণা সহজ হলে তাই করো I

সমস্ত সাধনার মূল কথা হচ্ছে --- যেষাং সময়ে স্থিতং মন : I

ভ্রু মধ্যে concentration যেমন থাকবে, তেমনি একটা ব্যাপ্তির বোধ ও থাকবে I সংকোচ আর বিস্তার দুটির ই ক্রিয়া একসঙ্গে চলবে I একটা বিন্দু থেকে ভাবনাকে যদি কদম্ব গোলকের মতো ছড়িয়ে দিতে পার, তোমার সত্তাকে উর্ধে - অধে আশেপাশে বিকীর্ণ করতে পার, তাহলেই বিশ্বের ছন্দের সঙ্গে তোমার জীবনের ছন্দ মিলবে I তার জন্য ভ্রু মধ্যস্থিতিকে সহজ করে নিতে হবে I এখন মনে হচ্ছে , ভ্রু মধ্যে আমি উজিয়ে যাচ্ছি I কিন্তু এ সংস্কার বর্জন করতে হবে I জানতে হবে , নিত্যকাল ধরেই তুমি ভ্রুমধ্যে ই আছ I ওই তোমার স্বধাম বা আপন ঘর I এক এক সাধকের এক এক জায়গায় স্থিতি হয় , স্বভাব ও সংস্কারের অনুকূলে I যার যেখানে স্বধাম , তার সেখানে থাকাই ভালো I সাধনায় আয়াস বর্জন করতে হবে I অত্যন্ত সহজ থাকবার চেষ্টা করবে Iপাখির যেমন পাখা আছে, মনে করবে তোমার ও তেমনি পাখা আছে - মুক্ত আকাশে অবার দুটি ডানা I তুমি কখনো গাছের ডালে বসতে পার, মাটি তে ও নেমে আসতে পার-- -কিন্তু যে কোনও মুহুর্তে তুমি দুই পাখা মেলে দিতে পার , এটি ভুলো না I

অতীত নিয়ে কখনে ভাবনা করবে না I অনুশোচনা করবে না কিছুর জন্যেই I বন্ধুর পথ ওঠা- নামা আছে ওই কিন্দু ধ্রুব জেনো - তার ভিতর দিয়েই তুমি এগিয়ে চলছ I একটা অবস্থা আসে যখন সব কিছুই সাধনার অনুকূল হয় I এমন কী সাময়িক পতনও I তখনই জানবে - দেবতা তোমার মধ্যে জেগেছেন I তোমায় হাতে ধরে নিয়ে চলেছেন I তুমি আর নিজের শক্তিতে চলছ না, চলছ তাঁর শক্তিতে I তাঁর ভালবাসায় তখন তোমার অন্তরের মধু I তুমি তাইতেই হর্ষত ফুল্লা সব সময় I

নব বর্ষের স্নেহাশিস নিও I প্রসাদ সুমুখী হও , আলোতে আনন্দে বীর্যে অনুপমা হও I



হৈমবতি

৫.৬.৫৫

আকাশ যে আমাদের কতখানি দেয়, তা বলবার নয় I এক নজরে অনেক দূর যখন দেখতে পাই, তখন দেখি - বিরাট বসে আছেন ধ্যান গম্ভীর হয়ে I অন্তর আলো আর আনন্দে ভরে ওঠে I কেন মানুষ সহর সৃষ্টি করলো ? যান্ত্রিক সভ্যতা কেন প্রকৃতির সঙ্গে বিচ্ছেদ এনে আমাদের অমানুষ করে তুলল ?

যন্ত্রের উপকারিতা অস্বীকার করিনা I কিন্তু তাকে দেবতা বলে তা পূজা করতে পারিনা I সে আমায় বিশ্রাম দেবে , মুক্তিই দেবে, অঅবার দাস হবে I আমিও তার চাপে পিষে মরব কেন ? সহর গুলোকে আমার মনে হয় পাকস্থলীর মতো I সেখান থেকে রস ছড়িয়ে পড়ুক দেশের সারা গায়ে, তাতে আপত্তি করি না I কিন্তু তাকে আড়ালে রাখতে চাই - অত নির্লজ্জতা ক়ে প্রকট করতে চাই না I

যাক গে , বাজে বকছি I একদিন মানুষ আবার প্রকৃতির কলে ফিরে যাবে , অথচ যন্ত্র - সম্পত্তি - ও তার থাকবে, এই আশা ই করছি I

...................তমভাবের কথা বলছ, তার কারনটা মনে হচ্ছে শারীরিক I তবে প্রত্যেক অবস্থাকেই utilise করা যায় I To struggle against কিন্তু পথ নয় - পথ হচ্ছে to try to understand

তমভাব এসেছে , তাই সই I চলে যাও তারও depth - এ, দেখবে - শিব স্বরূপ প্বসে আছেন আকাশ হয়ে I ওই আকাশের দেখা যেই পাবে, অমনি দেখবে তমিস্রার মাঝে উষার আলো ফুটতে আরম্ভও করেছে I এমনি করে প্রকৃতির যে কোনও গুনের ভিতর থেকে তার শুদ্ধ রূপটি আবিষ্কার করা চলে I মনের attitude এর উপর অনেক খানি নির্ভর করে I never worry I শুধু জেনে রাখো, যাই আসুক না কেন , তোমায় স্বচ্ছন্দ হয়ে তাকে deal করতে হবে I মুখে থাকবে মহিষ মর্দিনীর সেই প্রসন্ন স্মিতহাস্য I she is dealing with the asuric force with a smile !

যাই I ভালো থেকো I স্নেহাশিস I



হৈমবতি

৩.৭.৫৫.

যখন যে অবস্থা আসে , তাকেই যদি বরণ করে নাও, তাহলে তারই মাঝে আলো ঝলসে উঠবে I এখন যে বিরাট নৈ:শব্দ্যের ভাব এসেছে, তাকেই দেখো মায়ের মহানিশার রূপ I সেও তো তুমি ই I সৃষ্টি তো কোন ও কিছু করা নয় - উত্সারিত হওয়া I root meaning টাও তাই I আমরা নিজের মাপে কিছু করতে চাই বলে তাঁর হাওয়ার বেগটা বন্ধ করে দিই I এই হলো অবিদ্যা I আর বিদ্যা হলো ওই স্তব্ধতার গহনে ডুবে থেকে দেখা, তিনি কি ফুটিয়ে চলছেন I দেখতে দেখতে তার ইচ্ছার স্বরূপটা বুঝতে পারি I তখন ফুলঝুরিটি তিনি আমার হাতে তুলে দেন I আমি তখন তিনি হয়ে যাই I এই তো একাধারে মুক্তি আর সিদ্ধি I কিছুই চেও না সুধা , শুধু চেয়ে চেয়ে দেখো, তাহলেই সব পাবে I

অনেকগুলো প্রশ্ন করেছ , একটি একটি করে জবাব দেব I দশ মহাবিদ্যার কথাটাই আগে তুলি I দশ মহাবিদ্যার প্রথম চারটি হলো basic বিদ্যাশক্তি - তার পরের চারটি হলো ওই মূলের ই বিভূতি I সত - চিত - আনন্দ সহজ হয়ে হয়েছেন ভুবনেশ্বরী I ভুবনেশ্বরীর আবির্ভাব ই হলো জগতের পরমার্থ I তারপর দেখছি বাস্তব জগতের ছবি ভৈরবী ছিন্নমস্তা ধূমাবতীতে I এই ত্রয়ীর রুপান্তরে ই বগলামুখী মাতঙ্গী আর কমলার আবির্ভাব I ভৈরবী ছিন্নমস্তা আর ধুমাবতী তে প্রাণশক্তির তিনটি প্রাকৃত বিভাব প্রকাশ পাচ্ছে I hunger ,sex ,আর death I ভৈরবী পরমাসুন্দরী হয়ে ও কপালমালিনী রুধিরলিপ্তস্তনী , মাতৃ স্তন্য রক্তে মাখা I বুভুক্ষার এর চেয়ে সুন্দর symbol আর হতে পারত না I এই বুভুক্ষা শুধু প্রানের নয় , মনের ওI মনের বুভুক্ষা সৃষ্টি করছে চিন্তা-বিক্ষিপ্ত চিন্তা এবং তাই গ্রাস করে নিজেকে পুষ্ট করতে চাইছে I কিন্তু বুভুক্ষার তর্পণ হচ্ছে কোথায় ? দেবী রসনা ক়ে নিজের মাঝে আকর্ষণ করেও প্রাণের বুভুক্ষা মনের বুভুক্ষা দুয়েরই রূপান্তর ঘটাচ্ছেন I ছিন্নমস্তা সম্ভোগের ছবি প্রকৃতি সেখানে বিপারিতরতাতুরা I

অর্থাৎ পুরুষ প্রকৃতির দ্বারা সম্ভুক্ত প্রাকৃত ভোগের এই রীতি -ভোজ্যকে আমরা ভোগ করছি না, সেই আমাদের ভোগ করছে I এই রীতির উপর চলছে প্রাকৃত গুনলীলা I সত্ত্ব রজ:তম:তিনটি গুন দেবী এবং তার দুটি সঙ্গিনী I কিন্তু তবু ও এ সম্ভোগ জ্ঞানীর দৃষ্টিতে তাঁর আত্ম সম্ভোগ - আমি আমার ই রুধির পান করছি , করাচ্ছি I মাতঙ্গির মূর্তিতে ঠিক ভাব ফুটিয়ে তুলতে দেখিনি কোথাও I ওটি হবে কিশোরী শ্যামার মূর্তি I হাতে বিবেকের অসি কিন্তু জ্ঞানের আলো ফুটেছে স্নিগ্ধ শ্যামশ্রী নিয়ে I ধূমাবতীতে ভোগের অবসানে প্রলয় , তা আর বিস্তার করে বলতে হবে না I কিন্তু তারই পালটি দেখছি কমলাতে- বিশ্বের সহস্রদল কমলের বিকাশে , নিত্য সৃষ্টির আসক্ত উল্লাসে I মোটামুটি এই তত্ত্ব I

ভালো থেক I স্নেহাশিস I



হৈমবতী

২৪ .৭.৫৫

তুমি আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে সংকোচ কর না I আমার চিঠি লেখবার দিন তো নির্দিষ্ট থাকে, তোমার প্রশ্নের উত্তর সাধ্যমত দিতে আমি ত্রুটি করব না, আনন্দের সঙ্গেই দেব I জানতে চাওয়াটা তো অন্যান্য চাওয়ার মতো মানুষকে বাঁধে না , মুক্ত করেই দেয় I সুতরাং এ চাওয়া তো দোষের নয়.I 'মিছরির মিষ্টি মিষ্টির মধ্যে নয়' I

দক্ষিনের মিনাক্ষী দেবীকে আমি দেখিনি, আমার দক্ষিনে যাওয়াই হয় নি I সুতরাং তাঁর মাঝে মাতঙ্গীর রূপ ফুটেছে কিনা বলতে পারলাম না I আমার মনে এক মাতঙ্গী আছেন , আমি তাঁকে জানি , তাঁর কথা ই বলছিলাম I

তোমার মার্কন্দেয পুরান সম্পর্কিত প্রশ্নটা আরো ও একটু বিশদ করে জানাতে পার ? ঠিক কোন দেবীর চরিত্রের কথা, কোন অধ্যায়ে আছে জানলে আমার সুবিধা হয় I তাহলে বলতে পারি তার সঙ্গে শ্রী অরবিন্দের mother এর কী সম্পর্ক I আজ মার্কন্দেও পুরান ঘাটা ঘাটি করেও বুঝতে পারছি না I চন্ডীর শেষর দিকে কয়েকটি ভবিশ্য অবতারের কথা আছে I তার মধ্যে কেউ কী ? জানিও I

মহাকালী মহলক্ষ্মি মহা সরস্বতী - এই নাম কটি ই শ্রী অরবিন্দ মাত্র চন্ডী ত্থেকে নিয়েছেন I কিন্তু চন্ডী - বর্ণিত চরিত্রের সঙ্গে তাঁর mother এর তো মিল নাই I

যদি বেদান্তের দিক দিয়ে বোঝো তাহলে বলা চলে, সত - চিত -আনন্দ ইচ্ছা-জ্ঞান -ক্রিয়া -এই হলো ব্রম্হ এবং ব্রম্হ শক্তির স্বরূপ I আনন্দ ই ব্রম্হ শক্তির মুখ্য পরিচয় I সেই আনন্দ অভিব্যক্ত হচ্ছে ইচ্ছা জ্যানান এবং ক্রিয়াতে I শ্রী অরবিন্দের মহালাখ্মি আনন্দ, মহা সরস্বতী জ্ঞান , আর মহাকালী ইচ্ছা I তিনটি শক্তিকে তিনি সাজিয়েছেন ইচ্ছা আনন্দ এবং জ্ঞান এই ভাবে, আর জ্ঞানের সঙ্গে ক্রিয়াকে যুক্ত করেছেন , কেন না তাঁর দর্শনে জ্ঞান সক্রিয় I এই তিনটি শক্তি বিভূতির উর্ধ্বে , এবং তিনটিকে ধরে আছেন মহেশ্বরী I সামান্য ভাবে এই 'মহেশ্বরী' ক়ে' 'দেবী' বলতে পারা যায় I কিন্তু শ্রী অরবিন্দের এই পরিকল্পনার সঙ্গে তো চন্ডীর পরিকল্পনার মিল নাই I দর্শনের বিচারে বলতে গেলে চন্ডীর দেবী সাংখ্য সম্মতা আর শ্রী অরবিন্দের mother বেদান্ত সম্মতা----- তাও অপ্রচলিত বেদান্ত বাদের সঙ্গে তার মিল নাই I চন্ডীর সঙ্গে নাম সাদ্র্রিশ্য় ছাড়া দুটিতে আর কিছুর সাম্য তো দেখছি না I বরং চন্ডীর চরিত্র গুলি ই আমার কাছে একটু জটিল এবং রহস্যপূর্ণ বলে মনে হয় I যাক তোমার কাছ থেকে reference পেলে পরে এ প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য জানাব I যাই I স্নেহাশিস নিও I

to be continued ..........................